জাতীয় সংগীত এর বিধানমালা জেনে নিন ।

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' এমন কোন বাংলাদেশি নেই যে এই গানটা জানে না। এর প্রতিটা শব্দ যেন সত্যই বাঙ্গালি হৃদয়ের গভীর থেকে ভেসে উঠেছে। আমারা প্রায়শই বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কিংবা দৈনন্দিন কাজে জাতীয় সংগীত ব্যবহার করি। আসুন জেনে নেই কোথায় কোথায় জাতীয় সংগীতের কতটুকু অংশ ব্যবহৃত হয়
জেনে রাখা ভাল যে, ২৫ লাইন গানের ১০ লাইনকে জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সব অনুষ্ঠানে পুরো সংগীত বাজানোর নিয়ম নেই।
জাতীয় সংগীত বিধিমালা, ১৯৭৮ অনুযায়ীঃ

কখন কখন পুরো জাতীয় সংগীত বাজাতে হবে ?

বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন—একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সংসদ ভবনে প্রবেশ করার শুরুতে এবং ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ জাতীয় সংগীত বাজাতে হবে।

সব স্কুলের দিনের কার্যক্রম জাতীয় সংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে। অনেক অনুষ্ঠানেই দেখা যায়, জাতীয় সংগীতের চার লাইন গাওয়া হয়, কিন্তু বিষয়টি ভুল। বিধিতে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, যদি কোনো অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়, তবে তা সবটুকুই গাইতে হবে।


কখন কখন শুধু দুই লাইন জাতীয় সংগীত বাজাতে হবে ?

উল্লেখ্য, এই দুইলাইন হলঃ
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি

বিভিন্ন জাতীয় দিবস, যেমন—একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠানে দুই লাইন শুরুতে বাজানোর নিয়ম রয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণ যখন জাতির উদ্দেশে সম্প্রচার করা হয়, তখন সম্প্রচারের শুরু ও শেষে দুই লাইন বাজাতে হবে।

রাষ্ট্রপতি যখন কোনো প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন, তখনো দুই লাইন বাজাতে হয়। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হন বা কোনো অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অথবা প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন, তাহলে এসব ক্ষেত্রে তাঁদের আগমন ও প্রস্থানের সময় দুই লাইন সংগীত বাজানোর নিয়ম রয়েছে। রাষ্ট্রপতির সম্মানে যদি কোনো ভোজের আয়োজন করা হয় এবং তিনি যদি উপস্থিত থাকেন, তবে ভোজ গ্রহণের আগে দুই লাইন বাজাতে হবে।

বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান তাঁর রাষ্ট্রীয় বা সরকারি সফরে বাংলাদেশে এলে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করার সময় আগে জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন বাজাতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান, রাজপরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার বা সমমর্যাদার কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি যখন রাষ্ট্রপতির সালাম গ্রহণ করেন, তখন দুই লাইন বাজবে

বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তবে ওই অতিথির আগমন ও প্রস্থানের সময় প্রথমে কিংবা বাংলাদেশে নিযুক্ত ওই রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব প্রতিনিধি দ্বারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে সেই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানোর পর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের দুই লাইন ড্রামের তালে বাজাতে হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর পরিচয়পত্র হস্তান্তরের সময় গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন, তখনো দুই লাইন বাজাতে হয়

রাষ্ট্রীয় কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে শব দাহ বা দাফন করার পরও দুই লাইন ড্রামের তালে বাজানোর কথা বলা হয়েছে।

সিনেমা প্রদর্শনের আগে ও রেডিও, টেলিভিশনের দিনের অনুষ্ঠানের শেষেও দুই লাইন বাজানোর কথা বলা হয়েছে।

নৌবাহিনীর কোনো জাহাজে রাষ্ট্রপতি ছাড়া অন্য কারও জন্য জাতীয় সংগীত বাজানো যাবে না।

জাতীয় সংগীত চলাকালীন কী করা উচিত ?

জাতীয় সংগীত শুদ্ধ করে গাইতে হবে এবং গাওয়ার সময় এর প্রতি যথাযথ সম্মানও দেখাতে হবে। যখন জাতীয় সংগীত বাজানো হয় ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শন হয়, তখন উপস্থিত সবাইকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে এবং যখন পতাকা প্রদর্শন শেষ না করা হয়, তখন সবাইকে বাদকদলের দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে এবং কারও মাথায় টুপি থাকলে খুলে ফেলতে হবে।

যখন কোনো উচ্চপদস্থ ব্যক্তির আগমনে বা কোনো অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, তখন প্যারেড কমান্ডিং অফিসারের অর্ডারের অধীনে ব্যতীত অন্য সব অফিসার ও নন-কমিশন অফিসারকে জাতীয় সংগীতের প্রথম নোট থেকে শেষ নোট বাজানো পর্যন্ত স্যালুট করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
আর্টিকেলটি সংগ্রহ করা হয়েছেঃ কালের কণ্ঠ
Previous
Next Post »
Thanks for your comment